WB College Admission: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন উদ্বেগ! কোভিডের সময় থেকে স্কুল কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়া এবং ড্রপ আউট নিয়ে চিন্তার মধ্যে ছিল রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। তবে এবারের কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা তথা কলেজে ভর্তি হওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়ায় সেই চিন্তা আরও দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। চলতি বছরে ওবিসি সার্টিফিকেট সংক্রান্ত মামলার দরুন রাজ্যের কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া বেশ কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল। অনলাইন পোর্টালে ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন করা নিয়েও সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে শিক্ষা সংসদকে। এবারে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের মধ্যে কলেজ ছুটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আরো অধিক সমস্যার সম্মুখীন শিক্ষা দপ্তর।
চলতি বছরে শহর থেকে গ্রামের বিভিন্ন কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তির পরেও কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমেই তাদের সিট নিজে থেকেই বাতিল করে দিচ্ছে। রাজ্যের ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত জটিলতায় স্নাতক স্তরে ভর্তির প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত ছিল। যদিও তারপরে একাধিক বিলম্বনা কাটিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে শুরু করে দেওয়া হয় কলেজে ভর্তির আবেদন গ্রহণ। এই বিষয়ে মূল সমস্যা হলো- কলেজে ভর্তির অনলাইন পোর্টাল চালু হওয়া এবং ভর্তির প্রক্রিয়ার অনেক আগেই প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে নিট, জেইই–মেনস, সিইইউটি –র মতো সর্বভারতীয় পরীক্ষার ফলপ্রকাশ।
কিছুদিন আগেই রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে। তারপরেও কলেজে ভর্তির পরে পড়ুয়াদের বৃহৎ সংখ্যক অংশ নিজে থেকেই বাতিল করে দিচ্ছেন তাদের সিট। যদিও এই বিষয়ে সঠিক কারণ পরিষ্কার নয় শিক্ষা দপ্তরের কাছে।
গোটা রাজ্যে এই বছর ৪৬০ টি কলেজে সাড়ে নয় লক্ষ আসনের ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে আবেদন জমা পড়েছিল মাত্র এক তৃতীয়াংশের। এই আবেদন নিয়েও পরবর্তী সময়ে ভর্তির প্রক্রিয়া চালু করা হয় শিক্ষা দপ্তরের তরফে। বহু কলেজেই প্রথম দফায় অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ সিট খালি রয়ে গিয়েছে। সূত্রের তরফে জানা যাচ্ছে, অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া এক চতুর্থাংশ সিট ভরেনি। এমনকি যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা ইতিমধ্যেই ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যেও অনেকে কলেজে এসে নথি যাচাই করেননি। এমনকি কলকাতার বেথুন বা মৌলানা আজাদ এর মত নামি কলেজগুলিতেও এই একই অবস্থা।
উচ্চশিক্ষা দপ্তরের ভর্তি কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কলকাতার বেথুন কলেজে ৬৭৮ টি আসনের মধ্যে ১৭৩ জন ভর্তি হয়ে নথি যাচাই করেছেন। মৌলানা আজাদের ক্ষেত্রে ১২৬৩ টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩৪৪ জন নথি যাচাই করেছেন বলে খবর। অপরদিকে হুগলি র উত্তরপাড়ায় অবস্থিত রাজা পেয়ারি মোহন কলেজে মাত্র ৫১৭ জন নথি যাচাই করেছেন, যেখানে আসন সংখ্যা ২৪২৬ টি। এরকমই চিত্র ফুটে উঠেছে রাজ্যের জেলায় জেলায় অবস্থিত একাধিক কলেজে।
এই ঘটনার কারণ স্বরূপ অনেকেই মনে করছেন- সরকারি স্কুলের অনিয়মিত শিক্ষক নিয়োগের ঘটনা। বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে এবং বর্তমান সময়কে বিচার করলে সাধারণ ডিগ্রী কোর্সে আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না ছাত্র-ছাত্রীরা। এর ফলেই মূলত গত দুবছর ধরে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়ায় অনিহা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রীরা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে সহজে চাকরি পাওয়ার পথটি বেছে নিচ্ছেন। সাধারণ ডিগ্রি কোর্সে কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই পেশাগত বিভিন্ন কোর্সের দিকে মনোযোগী হয়ে উঠেছে।