পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২০১৬ সালের পর থেকেই বন্ধ রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ। SSC দুর্নীতি মামলা চলাকালীন চাকরিপ্রার্থীদের পাশাপাশি বিদ্যালয় গুলিতেও শূন্য পদ পূরণ পড়তে হিমশিম খেতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। বর্তমানে এসএসসি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও এই নিয়েও চলছে একাধিক গোলযোগ। এর পাশাপাশি এই বছর ডিসেম্বর মাসের আগে কোনভাবেই নতুন নিয়োগ সম্ভব নয়। সেই কারণে এবার পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ করতে ক্লাসটার মডেল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিল সংসদ।
প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিলের ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যালয় গুলিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মোট ৭০০২টি স্কুল রয়েছে, যেখানে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষকে। এর ফলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে তাই ক্লাসটার মডেল তৈরি করার নির্দেশ এসেছে। ইতি মধ্যেই এর ম্যাপিং প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে উচ্চমাধ্যমিকের তৃতীয় সেমিস্টার এবং একাদশের দ্বিতীয় সেমিস্টার আয়োজিত হতে চলেছে। তার আগেই এই মডেল কার্যকর হবে বলে জানানো হলো।
রাজ্যের ৭০০০ এরও বেশি বিদ্যালয়ে কলা বিভাগ, এবং বিজ্ঞান বিভাগ মিলিয়ে মোট ৪৯ টি বিষয় পড়ানো হয়। তবে শিক্ষকের অভাবে ছাত্রছাত্রীদের যতই এই সম্পর্কে কোনরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। কিন্তু এবার অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে, এই ক্লাস্টার মডেল কী?
ক্লাস্টার মডেল
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা সংসদের তরফে এবারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল ক্লাসটার মডেল তৈরির। এর মূল বিষয়টি হল- বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একত্রিত হয়ে একাধিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীকে পড়ানো। অর্থাৎ সংসদের তরফে এলাকাভিত্তিক একটি হাব বা কেন্দ্র স্কুল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই স্কুলের আশেপাশের কিছু বিদ্যালয়কে একত্রিত করে নেওয়া হবে। এর ফলে হাব স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা সমস্ত স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবকটে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে হবে। এর ফলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ১০ জন ছাত্র ছাত্রীর পিছনে ১ জন শিক্ষকের অনুপাত বজায় রাখা সম্ভব হবে।
প্রয়োজনে একটি স্কুলের ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কম হলে, অপর বিদ্যালয়ে থেকে ছাত্রছাত্রীকে এনে একসাথে সেই বিষয়ের পড়াশোনা করানো হবে। এই প্রক্রিয়াকেই এক কথায় ক্লাস্টার মডেল বলে সংজ্ঞায়িত করছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।
আরও পড়ুনঃ বিকাশ ভবন স্কলারশিপে আবেদন শুরু
এই ক্লাসটার মডেল অনুসারে, জেলা অনুযায়ী এডুকেশন সাব ডিভিশন ভাগ করা হবে এবং এর মধ্যে একটি জেলার সর্বাধিক ৩০ টি নিকটবর্তী বিদ্যালয় মিলিয়ে একটি এডুকেশন সাব ডিভিশন গঠন করবে সংসদ। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা, ব্যরাকপুর, দমদম, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলি জেলায় ক্লাস্টার মডেল তৈরির জন্য একটি ম্যাপিং করা হয়েছে। মূলত প্রথমে একটি বিদ্যালয়কে হাব বিদ্যালয় হিসাবে গণ্য করা হবে। এরপর ওই বিদ্যালয়ের সাড়ে তিন থেকে চার কিলোমিটার এর মধ্যে থাকা বিদ্যালয় গুলিকে ওই মূল বিদ্যালয়ের অধীনে রাখা হবে। একটি হাবের সাথে সর্বাধিক সাতটি করে বিদ্যালয়ে থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ Nabanna Scholarship 2025
চলতি বছরে কলা বিভাগের তুলনায় বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগে অনেক কম ছাত্রছাত্রী অ্যাডমিশন নিয়েছেন। এর ফলে কলা বিভাগের উপর ছাত্রছাত্রীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সেই ক্ষেত্রে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যাও যথেষ্ট কম রয়েছে। এর পাশাপাশি ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হওয়ায় এই কাঠামোর উপর যথেষ্ট পরিমাণে চাপ তৈরি হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের যাতে এই বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়, তার জন্যই এবার তৎপর পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা সংসদ।